বিভিন্ন বইতে এবং
বিভিন্ন ব্যক্তির রচিত শ্রী রামকৃষ্ণের চরিত্র অবলোকন করলে আমরা দেখতে পাই যে শ্রী
রামকৃষ্ণ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক এবং তাহাকে সকল ধার্মিক মতের ও পথের সঙ্গমস্থল
হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। তিনি সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করতেন না। তিনি ছোট্ট একটি
উদাহরন দিয়ে দিয়ে বলেছিলেন যে অন্ধেরা হাতি ছুঁয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিভিন্ন
ভাবে বিভিন্ন মত প্রকাশ করে, কিন্তু যাদের চোখ আছে তারাই সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে পারে,
তারাই পুরো হাতি টাকে দেখে।এই গল্প টি আশা করি সকল পাঠকের জানা আছে। ঠাকুর নিজেকে
কখনই অবতার বলে পরিচয় দেন নি, কেন না প্রতি অবতার কে ঘিরে গরে উঠে সম্প্রদায়, যার
থেকে তৈরি হয় সাম্প্রদায়িকতার, যা অতি ভয়ঙ্কর ও সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর। আমরা কথামৃতে
দেখতে পাই সেই সাম্প্রদায়িকতার উল্লেখ করে ঠাকুর বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও কেশব চন্দ্র
সেন কে বলেছিলেনঃ-“তোমাদের ঝগড়াবিবাদ- যেমন শিব ও রামের যুদ্ধ। রামের গুরু শিব।
যুদ্ধ ও হলো। দুজনে ভাব ও হলো। কিন্তু শিব ভুতপ্রেত গুলো ও রামের বানরগুলো অদের
ঝগড়া কিচকিচি আর মেটে না”। এ অতীব সত্যি কথা, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কথা ছেড়েই দিলাম
আজ ফেইস বুক ও বিভিন্ন ব্লগ ঘেঁটে দেখলে আমরা ঠাকুর মা স্বামীজী কে নিয়ে বিভিন্ন
গ্রুপের সন্ধান পাই, এবং প্রত্যেকে নিজেদের ভাব কেই শ্রেষ্ঠ বলে পোষণ করছেন, আর
সাথে অন্যদের ভাবের করছেন সমালোচনা, যার পরিনাম হতে চলেছে অতি ভয়ঙ্কর, সৃষ্টি
হচ্ছে মতানৈক্যের,মন কষাকষি, সৃষ্টি হচ্ছে দুরত্বের। আমরা যেন মুল ভাব থেকে দূরে
সরে যাচ্ছি। ঠাকুর, মা,স্বামিজির আদর্শ প্রচার ছেড়ে আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত প্রচার
নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি।
স্বামীজী বলেছিলেন
যে “যারা ঠাকুরের প্রকৃত ভক্ত- সে যেই হোক না কেন তাদের ভিতর কোন দলাদলি
নেই-থাকতেই পারে না। প্রত্যেক ভক্ত ঠাকুরকে আপন-আপন ভাবের রঙে রাঙিয়ে নিজেদের ভাবে
দেখতে ও বুঝতে চেষ্টা করে যার ফলে সৃষ্টি হয় ভাবের সংঘাত, মন কষা কষি,এবং তৈরি হয়
বিভিন্ন দলের। ঠাকুর যেন মহা-সূর্য, আর আমরা যেন প্রত্যেকে এক একরকম রঙ্গিল কাচ
চোখে দিয়ে সেই এক সূর্যকে নানা রঙ- বিশিষ্ট বলে দেখছি”।
ঠাকুরের অস্থি কাঁধে
করে এনে যেদিন স্বামীজী বেলুরমথে স্থাপন করেন সে দিন শরতবাবু ভবিষ্যতে শ্রীরামকৃষ্ণের
নামে সম্প্রদায় গড়ে উঠবে কিনা জানতে চাইলে স্বামীজী বলেছেলেন যে “হ্যাঁ কালে সম্প্রদায়
হবেই। এই দেখ না, চৈতন্যদেবের এখন দু-তিনশ সম্প্রদায় হয়েছে; যীশুর হাজার হাজার মত
বেরিয়েছে। কিন্তু ঐসকল সম্প্রদায়
চৈতন্যদেব ও যীশুকেই মানছে। আমাদের এই যে মঠ হচ্ছে, তাতে সকল মতের সকল ভাবের
কেন্দ্রস্থান হবে; এখান থেকে যে মহা সমন্বয়ের উদ্ভিন্ন ছটা বেরুবে, তাতে জগত
প্লাবিত হয়ে যাবে”।
স্বামীজী আরেকবার আর্য সমাজের নেতা লালা হংসরাজকে বলেছিলেন
“দেখুন আমার হাতে এমন শক্তি আছে যাহার দ্বারা আমি জগতের একতৃতীয়াংশ নরনারীকে এক
পতাকার নিচে আনিয়া দাড় করাইতে পারি। কিন্তু শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাহা আমার করিবার
ইচ্ছা নাই কারন তাহা হইলে আমার গুরুদেব- প্রবর্তিত ‘যত মত তত পথ’—এই মহাসমন্বয়
বাক্য খণ্ডিত হইয়া ভারতে একটি নুতন সম্প্রদায় গড়িয়া উঠিবে”।
আমরা যদি সত্যি
সত্যি স্বামীজী কে শ্রদ্ধা করি ভালবাসি তাহলে স্বামীজীর নির্দেশ আমাদের অবশ্যই
মানা কর্তব্য। স্বামীজী বলেছিলেনঃ “ভবিষ্যতে যে সকল ধর্ম আসিতে পারে তাহাদের জন্য আমরা
হৃদয় উন্মক্ত রাখিব। ঈশ্বরের বিধিশাস্ত্র কি শেষ হইয়া গিয়াছে, অথবা উহা
চিরকালব্যাপী অভিব্যক্তিরূপে আজও আত্ম-প্রকাশ করিয়া চলিয়াছে? জগতের আধ্যাত্মিক
অভিব্যক্তিসমূহের এই যে লিপি, ইহা এক অদ্ভুত পুস্তক। বাইবেল,বেদ ও কোরান এবং
অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ সমূহ যেন ঐ পুস্তকের এক একখানি পত্র এবং উহার অসংখ্য পত্র
এখনো অপ্রকাশিত রহিয়াছে। সেই সব অভিব্যক্তির জন্য আমি এ পুস্তক খুলিয়াই রাখিব।
আমরা বর্তমানে দাঁড়াইয়া ভবিষ্যতের অনন্ত ভাব রাশি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকিব”।
No comments:
Post a Comment